চট্টগ্রাম নগরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমিরুল ইসলামের বাড়ি চাঁদপুরে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে আজ বৃহস্পতিবার তিনি বাড়ি যাচ্ছিলেন। বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান। চাঁদপুরগামী বিশেষ ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল বেলা ৩টা ২০ মিনিটে। অথচ এটি ছেড়েছে ৪ টা ১২ মিনিটে, প্রায় ১ ঘণ্টা দেরিতে।

বিকেল ৪টার দিকে আমিরুল ইসলাম ট্রেনের একটি বগিতে দাঁড়িয়ে ১৭ মাস বয়সী ছেলে আরিফুল ইসলামকে বাতাস করছিলেন। তাঁর একমাত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে ট্রেনের আসনে বসতে পেরেছেন স্ত্রী। আমিরুল ইসলাম আসন পাননি। ছেলেকে বাতাস করতে করতে এই বাবা বলেন, বগিতে ফ্যান নেই। গরমে ছেলেটা কাহিল হয়ে পড়েছে। ঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়লে এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।

শুধু আমিরুল নয়, দেরিতে ট্রেন ছাড়ার কারণে তার মতো অনেক শিশুকেই ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেল। ট্রেনটির সব বগিতেই গাদাগাদি করে ঘরমুখী যাত্রীরা উঠেছিলেন।

স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ আরাফাত। তিনি চট্টগ্রামের একটি শিপিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। থাকেন নগরের ইপিজেড এলাকায়। তাঁর বাড়িও চাঁদপুর সদরে। আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ঝক্কিঝামেলা এড়াতে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্টেশনে এসে ভোগান্তি পোহাতে হলো।

স্টেশনে কথা হয় মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। তাঁর মেয়ের বয়স ৩ বছর। মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী সালমা হক বেশ ভোগান্তিতেই পড়েছিলেন। কোনোভাবেই মেয়েকে ট্রেনের ভেতর রাখা যাচ্ছিল না। পরে কোলে নিয়ে বাবা দাঁড়িয়ে ছিলেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ফ্যানের নিচে।

চাঁদপুরগামী বিশেষ ট্রেনের প্রতিটি বগিই ছিল যাত্রীতে ঠাসা। আজ বিকেলে চারটায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে

কথায় কথায় মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদে বাড়িতে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা হবে। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় গ্রামে গরু কিনেছেন তাঁরা। ফলে আমেজ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু স্টেশনে এসে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মেয়ের।

আজ টানা ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। এই লম্বা ছুটি কাটাতে আজও শহর ছেড়েছেন হাজারো মানুষ। স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। এর আগে সকালে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেসও নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩০ মিনিট পর ছাড়ে। এতে বিপাকে পড়েন ওই ট্রেনের যাত্রীরা। বিজয় এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ৯টা ১০ মিনিটে, ছেড়েছে ৯টা ৪০ মিনিটে। গতকাল বুধবার বিজয় এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩ ঘণ্টা ও চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট দেরিতে ছেড়েছিল।

ট্রেন দেরিতে ছাড়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইঞ্জিনের সামান্য ত্রুটির কারণে চাঁদপুরগামী বিশেষ ট্রেনটি দেরিতে ছেড়েছে। আর বিজয় এক্সপ্রেস ৩০ মিনিটের মতো দেরিতে ছেড়েছে। এ ছাড়া বাকি সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছেড়েছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এবারের ঈদযাত্রায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রায় সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে। তবে প্রতিদিন একটি-দুটি করে ট্রেন সূচি অনুযায়ী চলেনি। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকা, কক্সবাজার, সিলেট, জামালপুর ও চাঁদপুর রুটে আন্তনগর,  লোকালসহ ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত আন্তনগর কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেসও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করেন। এসব ট্রেনের পাশাপাশি গতকাল থেকে চাঁদপুর রুটে বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ঈদের আগের দিন কাল শুক্রবার পর্যন্ত এই ট্রেন চলাচল করবে।