পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে অবশেষে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়েছে তাঁর পরিবারকে। আজ মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন তাঁর বোন উজমা খান। দীর্ঘদিন ধরে ইমরানের সঙ্গে পরিবার বা দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা-কর্মীদের দেখা করতে না দেওয়ায় তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল।
আজ কারাগারে ইমরানের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলেন উজমা। পরে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইমরান খানের স্বাস্থ্য পুরোপুরি ভালো আছে। তবে তিনি খুবই রেগে আছেন। ইমরান বলেছেন, তাঁর ওপর মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। তাঁকে সারা দিন কারাকক্ষে আটকে রাখা হয়। অল্প সময়ের জন্য বাইরে যেতে দেওয়া হয়। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না।
উজমাসহ ইমরানের অন্য দুই বোন আলিমা খান ও নোরিন নিয়াজি আজ আগে থেকেই রাওয়ালপিন্ডির ফ্যাক্টরি নাকা এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে কারাগারের দিকের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। কিছু দূর পরপর বসানো হয়েছিল তল্লাশিচৌকি। এত বাধার পরও কারাগারের দিকে হেঁটে এগিয়ে যান তিন বোন। এ সময় তাঁদের একটি তল্লাশিচৌকিতে আটকে দেওয়া হয়।
পরে শুধু উজমাকে কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এই কারাগারে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে বন্দী রয়েছেন ইমরান। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগেও মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলার রায়ও দিয়েছেন আদালত। তবে এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন ইমরান।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ অক্টোবরের পর থেকে কারাগারে ইমরান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির সঙ্গে কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ইমরানের ছেলে কাসিম খান সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, বাবা আদৌ বেঁচে আছেন কি না, তা জানতে না পারা একধরনের মানসিক অত্যাচার।
গতকাল সোমবার পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার অভিযোগ করেন—আদিয়ালা কারাগার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের আদেশ পালনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আদালতও তা বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছেন না। তাই তাঁরা বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যরা আজ ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে বিক্ষোভ করবেন। পরে আদিয়ালা কারাগারের পাশে প্রতিবাদ জানাবেন।
সে অনুযায়ী ইমরানের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের অধিকারের দাবিতে আজ ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ও আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বিক্ষোভ করেন পিটিআইয়ের নেতা–কর্মীরা। ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে সেই কর্মসূচিতেই অংশ নিয়েছিলেন উজমা খান। এই বিক্ষোভের আগে গতকাল ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল সরকার।
১৪৪ ধারা জারির অর্থ হলো, ওই এলাকায় চার বা তার বেশি মানুষ কোনো সভা–সমাবেশ করতে পারবেন না। আজ ইমরান–উজমা সাক্ষাতের আগে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাল্লাল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, পিটিআই নেতা–কর্মীরা যদি ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বা আদিয়ালা কারাগারের দিকে যান, তাহলে কোনো বাছবিচার ছাড়াই তাঁদের ওপর ১৪৪ ধারা কার্যকর করা হবে।
পার্লামেন্টে পিটিআই–সমর্থিত সদস্যদের আইন মেনে চলার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। পিটিআইয়ের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে মিলিয়ে তাল্লাল চৌধুরী বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা’ ভয় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবং খবরের শিরোনাম হওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজছে।