ডিগ্রির আগেই চাকরি পেয়েছিলেন, এখন কাজ করছেন ইন্দোনেশিয়ায়
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 20-04-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) তখনো নতুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন পরিচিতি নেই, তথাকথিত ‘মামা–চাচা’ও নেই, তবু ডিগ্রি অর্জনের আগেই চাকরির যোগদানপত্র হাতে পেয়ে গিয়েছিলেন মাসুদ ইফতেখার। এখন তিনি সুইডেনভিত্তিক বৈশ্বিক টেলিকম প্রতিষ্ঠান এরিকসনের ইন্দোনেশিয়া শাখার ‘কি অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোলার’। এর আগে দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারে কাজ করেছেন প্রায় পাঁচ বছর। কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন এই করপোরেট ব্যক্তিত্ব?

শিক্ষকের পরামর্শে পথচলা

২০০৭ সালে ইউআইইউর ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেন মাসুদ। মূল বিষয় (মেজর) ছিল ফিন্যান্স। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের কোন স্মৃতিটা বেশি মনে পড়ে জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে খুব ভালো সময় কেটেছিল। তখন শিক্ষার্থী কম ছিল বলেই হয়তো এতটা সাহচর্য পেয়েছি। দুই হাত ভরে তাঁরা আমাকে শিখিয়েছেন, জীবনে ভালো করার পথ বাতলে দিয়েছেন। ইংরেজি বিভাগের টিএ (শিক্ষকের সহকারী) হিসেবে কাজ করেছি।’

 

 

দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা ইউআইইউর তৎকালীন ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে কাটত। তবে আড্ডা নয়, পড়ালেখার প্রতিই মাসুদের মনোযোগ ছিল বেশি। শিক্ষকদের কথা তাঁকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করত। মাসুদ বলেন, ‘তখন আমাদের ডিন ছিলেন হাবীব স্যার। স্যার বলতেন, “ম্যান ক্যান ডু, হোয়াট ম্যান হ্যাজ ডান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর এক শিক্ষার্থী যদি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি পায়, তুমিও পাবে। বড় স্বপ্ন সামনে রেখে শতভাগ চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হবে।”’ এই পরামর্শ ও উপদেশগুলোই আজকের পর্যায়ে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে বলে মনে করেন তিনি।

চাকরির পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন মাসুদ ইফতেখার। প্রায় দুই বছর হয় সিলিকন ভ্যালির ফাউন্ডার ইনস্টিটিউট ও স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ নামের দুটি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছেন। অর্থনীতিসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে সফল হওয়ার উপায় বাতলে দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আয়োজিত সেশনে মেন্টরিংয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে এখনো কোথাও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেখা পাননি মাসুদ। বলছিলেন, ‘হয়তো তাঁরা অন্য কোথাও কাজ করছেন, ভালো করছেন। আমার সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি। তবে বাংলাদেশের কোনো সংস্থা যদি আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ বা নির্দেশনা চায়, তাদের বলব—আমরা সাহায্য করার জন্য মুখিয়ে আছি।’

এক বছর ধরে উদ্যোক্তা হিসেবেও পথচলা শুরু করেছেন মাসুদ ইফতেখার। ইন্দোনেশিয়ায় নবায়নযোগ্য সৌরশক্তিতে তাঁর বিনিয়োগ আছে। সে দেশে ফার্মিংয়ের সঙ্গেও যুক্ত আছেন তিনি।

 

নিজেকে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ

প্রায় ১৮ বছরের পেশাজীবনে বাংলাদেশ ছাড়া কাজ করেছেন পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়। তবে শুরুটা মাসুদ ইফতেখারের জন্যও কঠিন ছিল। সেই গল্পও শোনালেন তিনি, ‘চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময়ই আমার চাকরি হয়। কিন্তু অফিস করতে গিয়ে দেখি, প্রায় ৭০ শতাংশ সহকর্মী আইবিএ থেকে পড়া। তারপরের বড় অংশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। আমার বিশ্ববিদ্যালয় কেউ সেভাবে চিনত না। বলতাম ইউআইইউ, ধানমন্ডি। নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে প্রতিদিন। প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর পর মানুষ আমার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে প্রশ্ন করা বন্ধ করেছে। তখন আমার কাজ দিয়েই আমাকে বিচার করত।’

আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। ২০০৫ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, তখন থেকেই মাসুদ ভাবতেন, পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান। ২০১০ সালে যদি সহকারী ব্যবস্থাপক হতে চান, তাহলে চাকরিতে প্রবেশ করতে হবে ২০০৭ সালে—এসব হিসাব–নিকাশও করছিলেন তখন থেকেই। শিক্ষক ও মেন্টরের সঙ্গে পরামর্শ করে জীবনের প্রতিটি স্তরে তিনি পরিকল্পনামাফিক এগিয়েছেন। এক্সেলে ভবিষ্যৎ বছরের পরিকল্পনা লিখে রাখতেন, যেন লক্ষ্য ঠিক থাকে।

প্রথম চাকরির ইন্টারভিউয়ে বসার সময় কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ছিল শুধু সিজিপিএ আর জ্ঞান। সে সময়ের কথা স্মরণ করে মাসুদ ইফতেখার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার অনুরোধ বা পরামর্শ, পড়াশোনা করে নিজের বিষয়ে দক্ষ হও। অনেকে মনে করে, ইংরেজি জানলেই সে স্মার্ট। কিন্তু বিদেশে তো সবাই ইংরেজি জানে, সবাই তো সফল নয়। তাই বিষয়ের ওপর জ্ঞান রাখার পাশাপাশি কোম্পানিগুলো কীভাবে তত্ত্বকে বাস্তবায়িত করছে, তা জানতে হবে। চ্যালেঞ্জ ও বেনিফিট সম্পর্কে শিখতে হবে। নতুন কোনো আইডিয়া তৈরি করতে পারলে সেটা খুবই ভালো।’

‘ব্যর্থ’ শব্দটাকে খুব বেশি পাত্তা দেন না মাসুদ। তাঁর মতে, ‘প্ল্যান এ কাজ না করলে, প্ল্যান বি তো আছেই। একটা না হলে, অন্যটা হবে। সফলতার চেয়ে শতভাগ চেষ্টা করার মানসিকতাই বরং বেশি দরকারি।’

শেয়ার করুন