যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদ জব্দ করেছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি গুরুতর ও সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে কাজ করে। মঙ্গলবার রাতে আল-জাজিরার অনুসন্ধানী শাখাকে (আই-ইউনিট) দেওয়া এক বিবৃতিতে সাইফুজ্জামানের সম্পদ জব্দের আদেশ পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে তারা।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মিত্র। সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
আই–ইউনিটকে দেওয়া বিবৃতিতে এনসিএর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে চলমান একটি দেওয়ানি তদন্তের অংশ হিসেবে এনসিএ কয়েকটি সম্পত্তি জব্দের আদেশ (ফ্রিজিং অর্ডার) পেয়েছে।’
সম্পত্তি জব্দের আদেশের ফলে কার্যত সাইফুজ্জামান চৌধুরী এখন সেগুলো আর বিক্রি করতে পারবেন না। এমন সময় ‘ব্রিটেনের এফবিআই’ হিসেবে পরিচিত পুলিশি সংস্থাটি এই পদক্ষেপ নিয়েছে, যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফর করছেন।
এর আগে ২৩ মে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের লন্ডনের ৯টি সম্পদ জব্দের আদেশ পাওয়ার কথা জানিয়েছিল এনসিএ। এসব সম্পদের অর্থমূল্য প্রায় ৯ কোটি পাউন্ড (১৬৪ টাকা ধরে যা প্রায় ১ হাজার ৪৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা)।
গত বছর আল–জাজিরার এক প্রামাণ্যচিত্রে বলা হয়েছিল, ৫৬ বছর বয়সী সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যে ৩৫০টির বেশি সম্পদের (বাড়ি ও ফ্ল্যাট) মালিক। এর মধ্যে ঠিক কতগুলোর বিষয়ে এনসিএ পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আই-ইউনিট এতটুকু জানাতে পারছে যে, লন্ডনের সেন্ট জনস উডে সাইফুজ্জামানের বিলাসবহুল বাড়িটি জব্দের তালিকায় রয়েছে।
আল-জাজিরার আই-ইউনিটের ছদ্মবেশী সাংবাদিকদের গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে ১১ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ১৮১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা) দিয়ে কেনা এই বাড়ির দৃশ্য ছিল। সরকারের মন্ত্রী থাকাকালে সাইফুজ্জামান যে সম্পদ অর্জন করেছিলেন, সে বিষয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সাংবাদিকেরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
ওই সাক্ষাতের সময় সাইফুজ্জামান সাংবাদিকদের কাছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা তাঁর সম্পদের বিবরণ তুলে ধরেন। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে আল–জাজিরার সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আসলে তাঁর ছেলের মতো।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘তিনি জানেন, আমার এখানে ব্যবসা আছে।’
গত অক্টোবরে “দ্য মিনিস্টার’স মিলিয়নস” শীর্ষক আল–জাজিরার ওই প্রামাণ্যচিত্রে বলা হয়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য সাইফুজ্জামান। দেশের মুদ্রা আইন অনুযায়ী একজন নাগরিকের বাংলাদেশ থেকে বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বিদেশে নিতে পারার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও একটি বিশাল সম্পদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, সাইফুজ্জামান লন্ডন, দুবাই ও নিউইয়র্কে আবাসন ব্যবসায় ৫০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ট্যাক্স রিটার্নে তাঁর এসব বিদেশি সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি।
আল–জাজিরাকে দেওয়া আগের এক বিবৃতিতে সাইফুজ্জামান বলেছিলেন, বিদেশে তাঁর সম্পত্তি কেনার জন্য ব্যবহৃত তহবিল বাংলাদেশের বাইরের বৈধ ব্যবসা থেকে এসেছে। তিনি বছরের পর বছর এসব ব্যবসার মালিক। সাবেক এই মন্ত্রী আরও দাবি করেন, তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দমননীতির শিকার।