টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায়। কয়েক দিনের মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের পর আজ শনিবার জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা চারদিকে, কোথাও স্বস্তি নেই।
এমন পরিস্থিতিতে কোনো সুখবর দিতে পারেননি আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা বলছেন, আগামীকাল তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।
পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বিকেল তিনটায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ২৩ শতাংশ। আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত এটিই সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শুক্রবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ওই দুই দিনও সারা দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
গরমে লোকজন অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে পড়লেও খেটে খাওয়া মানুষের নিস্তার নেই। চুয়াডাঙ্গা–মেহেরপুর মহাসড়ক ঘেঁষে সদর উপজেলার দৌলাতদিয়াড়ে বিএডিসির শস্য গুদাম এবং হাতিকাটা, আলুকদিয়া ও ভালাইপুরে গড়ে ওঠা খাদ্যশস্যের অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হাজারো শ্রমিক কর্মরত আছেন। তাঁরা প্রচণ্ড রোদের মধ্যেই দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
আজ শনিবার দুপুরে হাতিকাটা গ্রামে এনামুল হকের খাদ্যগুদাম–সংলগ্ন চাতালে ১৪ জন শ্রমিককে ধান শুকাতে ও বস্তা ভর্তি করে গুদামজাত করতে দেখা গেল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা সঙ্গে থাকা বোতল থেকে পানি খাচ্ছিলেন, আবার কেউ খানিক দূরের নলকূপ থেকে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আসছিলেন।
কথা হয় শ্রমিক সরদার ৫৫ বছর বয়সী মিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। ৩০ বছর ধরে শ্রমিকের কাজ করা মিরাজুল বলেন, ‘সূয্যুর তাপে গা-ডা পুড়ে যাচ্চে। সেদিক দেকতি গেলি তো সুংসার চলবে নারে বাবা।’
আলুকদিয়া এলাকায় একটি গুদামের চাতালে বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে শুকানো ধান বস্তায় ভর্তি করতে দেখা গেল। আলাপকালে শ্রমিকেরা জানান, এক বস্তা ধান (৫০ কেজি) গুদাম থেকে বের করে রোদে দেওয়া, শুকানো এবং শুকানোর পর বস্তায় ভর্তি করে গুদামে সাজালে বস্তাপ্রতি ১৮ টাকা করে পেয়ে থাকেন। শ্রমিক রিংকু মিয়া বলেন, ‘গরিপ হয়ে জন্মায়চি, কাজ কইরেই খাতি হবে। এই কাজের ওপরই আমার পাঁচ জুনের সুংসার। রোদির জন্নি তো বাড়িত বইসে থাকলি সুংসার চলবে না।’ অন্যান্য শ্রমিকদের বক্তব্যও একই রকমের।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, সকাল থেকেই আকাশ মেঘমুক্ত-পরিষ্কার। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই এবং পশ্চিম থেকে গরম হাওয়া প্রবেশ করায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভেঙেছে। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। পরশু থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও তাপপ্রবাহ আরও কয়েকস দিন অব্যাহত থাকবে। পশ্চিমা লঘুচাপ নিষ্ক্রিয় থাকা এবং জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে চলমান অস্বস্তিকর অবস্থা আরও কয়েক দিন থাকবে। এই লঘুচাপ সক্রিয় হলেই স্বস্তি ফিরে আসবে।’
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।
২০০২ সাল থেকে চলতি মৌসুম পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল গত বছরের ৩০ এপ্রিল। এদিন রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২৪ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সবচেয়ে বেশি রেকর্ড এপ্রিল মাসে, ১৪ বার। এ ছাড়া, মে মাসে ছয় ও জুন মাসে চারবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়।