বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালেন। তাঁর মাথায় কিপ্পা (ইহুদিদের ধর্মীয়ভাবে মাথায় পরার ছোট গোলাকার টুপি)।
কাঁধে তালিত (ইহুদিদের ধর্মীয় স্কার্ফ, যেটি ধর্মীয় দায়িত্ব ও ঈশ্বরের আদেশ পালনের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়)। প্রাচীন দেয়ালটাতে হাত রেখে তিনি খানিকক্ষণ চুপচাপ প্রার্থনা করলেন।
দেয়ালের একটি ফোকরে একখণ্ড কাগজ পুরে দিলেন। এরপর সেখান থেকে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন।
এটি গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভোরের ঘটনা। সূর্যাস্তের পর, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নেতানিয়াহু ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘কয়েক মুহূর্ত আগে ইসরায়েল অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করেছে।’
পরদিন শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সেই চিরকুটটির (যেটি নেতানিয়াহু আগের দিন দেয়ালের ফোকরে গুঁজে এসেছিলেন) একটি ছবি প্রকাশ করল।
ছবিতে দেখা গেল, কাগজে নেতানিয়াহুর নিজের হাতে হিব্রু ভাষায় লেখা: ‘হেন আম কে-লাবি ইয়াকুম’। বাংলায় এর অর্থ ‘এই জাতি সিংহের মতো জেগে উঠবে।’
এর নিচে হিব্রুতে বেনিয়ামিনের নিজের স্বাক্ষর।
‘হেন আম কে-লাবি ইয়াকুম’ একটি বাক্যাংশ। এটি নেওয়া হয়েছে ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব নাম্বার্স-এর ২৩: ২৪ আয়াত থেকে।
পুরো আয়াতটির অর্থ: ‘দেখো, এই জাতি সিংহের মতো জেগে উঠবে এবং এক তাগড়া সিংহের মতো নিজেকে তুলে ধরবে যে শিকার ধরে তার রক্ত আকণ্ঠ পান না করা পর্যন্ত বিশ্রামে গা এলিয়ে দেবে না।’
‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ই ইসরায়েলের একমাত্র সামরিক অভিযান নয়, যার নাম ইহুদি বাইবেল থেকে নেওয়া। ইসরায়েল প্রায়ই তার অভিযানগুলোর নামকরণ করে ইহুদি বাইবেল কিংবা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে।
তেল আবিবের উপকণ্ঠের রামাত গান এলাকায় অবস্থিত ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম একাডেমিক প্রতিষ্ঠান বার ইলান ইউনিভার্সিটির (যেখানে ইহুদি ঐতিহ্য ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষাদান করা হয়) গবেষক দালিয়া গাভরিয়েলি-নুরির ভাষ্যমতে, ইসরায়েল তার ৭৫ বছরের ইতিহাসে যতগুলো সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তার অর্ধেকের নাম ইহুদি বাইবেল থেকে নেওয়া।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে বাশার আল–আসাদ সরকারের পতন ঘটানোর উদ্দেশে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সিরিয়ায় ‘অপারেশন অ্যারো অব বাশান’ নামের একটি অভিযান চালিয়েছিল।
‘বাশান’ শব্দটি ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লেখ করা একটি অঞ্চলের নাম। এটি সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্ব দিকের ভূমিকে বোঝায়। প্রাচীনকালে ইহুদিরা বাশান রাজাকে পরাজিত করে এই অঞ্চল দখল নিয়েছিল।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েল যেসব অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং সেসব অভিযানে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে, সেগুলোতে তারা বিভিন্ন বিবলিক্যাল নাম ও প্রতীক ব্যবহার করছে।
অনেক বিশ্লেষকের মতে, এর মধ্য দিয়ে তারা ফিলিস্তিনের ভূমির ওপর ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত অধিকার’ দাবি করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধগুলোকে ন্যায্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
নেতানিয়াহুর বিবৃতিতে ‘আমালেক’-এর উল্লেখ কতটা ভয়ংকর এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে কতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তা বুঝতে ইহুদিধর্মীয় ভাষ্যের দিকে নজর বোলাতে হবে।
গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান চালানোর নির্দেশ দিতে গিয়ে নেতানিয়াহু এ পর্যন্ত অন্তত তিনবার হিব্রু বাইবেলে উল্লেখ করা আমালেকের কাহিনি সেনাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেলের তোরাহ অংশের ২৫: ১৭ আয়াত থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন।
এই আয়াতে বলা আছে: ‘স্মরণ করো, আমালেক তোমার সঙ্গে কী করেছিল।’ নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘আমরা মনে রাখি এবং যুদ্ধ করি।’ নেতানিয়াহুর এই কথার মধ্যে হিব্রু বাইবেলের আরেকটি আয়াতের সংযোগ আছে বলে অনেক বিশ্লেষক তখন বলেছিলেন।
সেই আয়াতটি হলো: ‘যাও, আমালেকদের ওপর আঘাত হানো এবং যা কিছু তাদের আছে সব সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দাও; তাদের কাউকে ছেড়ে দেবে না—পুরুষ, নারী, শিশু, স্তন্যপানকারী নবজাতক, গরু, ভেড়া, উট এবং গাধা—সবকিছু মেরে ফেলো।’ (১ শমূয়েল ১৫:৩)
নেতানিয়াহুর বিবৃতিতে ‘আমালেক’-এর উল্লেখ কতটা ভয়ংকর এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে কতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তা বুঝতে ইহুদিধর্মীয় ভাষ্যের দিকে নজর বোলাতে হবে।
আমালেক ছিল একটি প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী। ফেরাউনের কবল থেকে মুসা নবী (মোজেস) বনি ইসরাইল বা ইসরায়েলিদের মুক্ত করে মিসর থেকে তাঁদের পূর্বপুরুষের (ইয়াকুব নবী, যাঁর আরেক নাম ‘ইসরাইল’) ভূমির দিকে, অর্থাৎ কিনান বা আজকের ফিলিস্তিনের দিকে যখন রওনা হয়েছিলেন (যূথবদ্ধ নির্গমন বা এক্সুডাস), তখন আমালেক সম্প্রদায় তাদের ওপর মরুভূমিতে আক্রমণ করেছিল।
এই আক্রমণকে ইহুদি ধর্মে এক নির্মম ও কাপুরুষোচিত কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইহুদিধর্মীয় গ্রন্থের ভাষ্যমতে, পরবর্তী সময়ে ঈশ্বর আদেশ দেন, আমালেকের নাম পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। তোরাহ-এর ২৫: ১৭ আয়াতে বলা হয়েছে: ‘তুমি আকাশের নিচ থেকে আমালেকের চিহ্ন মুছে ফেলবে।’
ঐতিহাসিকভাবে ইহুদিদের কাছে আমালেক কেবল একটি জাতি নয়, বরং চরম শত্রুতা, ঈশ্বরবিরোধিতা ও নিপীড়নের প্রতীক হয়ে ওঠে।
ইসলামের ভাষ্যেও আমালেকের উল্লেখ পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে আমালেক নামটির সরাসরি উল্লেখ নেই। তবে কিছু ইসলামি ঐতিহাসিক সূত্রে, আমালেকদের প্রাচীন মিসর বা আরব অঞ্চলের আদি অত্যাচারী গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ইবনে কাসির, তাফসির কুরতুবি, তাফসির আল-জালালাইন প্রভৃতি প্রাচীন তাফসিরে বলা হয়েছে, এই শত্রুবাহিনী ছিল জালিম ও অত্যাচারী এক জাতি, যারা ‘আদ’ জাতির ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের উত্তরসূরি হতে পারে।
আমালেকরা ফিলিস্তিন, মিসর ও হেজাজ অঞ্চলে বসবাস করত বলে মুসলিম ঐতিহাসিকেরা ধারণা দেন। তাঁদের ‘জাব্বারিন’ বা অত্যাচারী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই আমালেক ইহুদি ইতিহাসে একমাত্র জাতি, যাদের পুরোপুরি নির্মূলের আদেশ দেওয়া হয়। তাদের স্মৃতি ও নাম নিশ্চিহ্ন করার আদেশ আজও তোরাহ পাঠের সময় বা ধর্মীয় বক্তৃতায় স্মরণ করা হয়।
আজকের দুনিয়ায় আমালেক জাতিগোষ্ঠী অবশিষ্ট নেই। তবে ইহুদিদের ধর্মীয় ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিটি প্রজন্মে ‘আমালেক’ নতুন রূপ নিয়ে ফিরে আসতে পারে বলে বিবেচিত হয়।
মূলত রাজনৈতিক বা ধর্মীয় শত্রুকে ইহুদিরা প্রতীকীভাবে ‘আমালেক’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। ইহুদিদের ধর্মীয় নেতা বা রাবাইরা এবং ইহুদিধর্মগ্রন্থ ‘তানাখ’-এর পণ্ডিতদের বেশির ভাগই মনে করেন, ইরানিরা, ফিলিস্তিনিরা তথা মূলত মুসলমানেরাই হলো আজকের দিনের ‘আমালেক’।
ফলে নেতানিয়াহু যখন গাজায় সেনা পাঠানোর সময় সেনাদের তোরাহ-এর ২৫: ১৭ আয়াত উল্লেখ করে ‘আমালেকদের’ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার কথা মনে করিয়ে দেন, তখন সেটিকে গাজার নারী-পুরুষ-বৃদ্ধসহ সব ফিলিস্তিনিকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করার নীতি হিসেবে দেখা হয়। নেতানিয়াহু বলতে চান, এই আদেশ তাঁর নয়, বরং এটি ঈশ্বরের আদেশ।
ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় রাবাই বা ধর্মগুরুরাও এই ‘ফতোয়া’ দিয়েছেন যে, অ–ইহুদি শত্রুদের সবাই এ সময়কার ‘আমালেক’। সে কারণে তাদের নারী–শিশু–বৃদ্ধ সবাইকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়াই ঈশ্বরের আদেশ।
সিংহ যেমন শিকার ধরে তার রক্ত পান করে পরিতৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেয় না, তেমনি ইহুদিদেরও ‘আমালেকদের’ সমূলে বিনাশ না করা পর্যন্ত বিশ্রাম নেওয়ার অনুমতি নেই।
ইৎসহাক শাপিরা এবং ইয়োসেফ এলিৎসুর নামের দুজন রাবাইয়ের লেখা ‘তোরাত হামেলেখ’ (ইংরেজিতে যার শিরোনাম ‘কিং'স তোরাহ’ এবং বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে ‘রাজাধিরাজের তোরাহ’) একটি ইহুদি ধর্মীয় গ্রন্থ বা হালাখার প্রথম খণ্ড ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবিসির ‘কিংস তোরাহ স্প্লিটস ইসরায়েল'স রিলিজিয়াস অ্যান্ড সেক্যুলার জ্যুস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই বইয়ে মূলত এমন পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ইহুদি ধর্মীয় আইনের ভিত্তিতে অ–ইহুদিদের (অর্থাৎ ইহুদি নয় এমন মানুষ) হত্যা করা বৈধ হতে পারে। এই দাবি করা হয়েছে নির্দিষ্ট ইহুদি ধর্মগ্রন্থের নির্বাচিত উদ্ধৃতির দোহাই দিয়ে।
বইটির প্রথম খণ্ডে আলোচনা করা হয়েছে—শান্তিকাল ও যুদ্ধকাল, উভয় সময়েই অ–ইহুদিদের হত্যা সংক্রান্ত বিধান। সেখানে বলা হয়েছে, অ–ইহুদিরা যদি ‘নূহের সাতটি বিধান’ না মানে, তাহলে যুদ্ধের সময় ছাড়াও তাদের হত্যা করা বৈধ হতে পারে।
২০১৬ সালের শেষে বইটির দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। সেখানে আলোচনা করা হয়েছে শাসনব্যবস্থা ও শাসকের ক্ষমতা নিয়ে।
এই অংশে একটি সরকার গঠন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, একজন নাগরিকের সেই সরকারের প্রতি কতটা আনুগত্য থাকা উচিত এবং সরকার চাইলে কোনো ব্যক্তিকে কেন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে পারে—তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
বইটির পঞ্চম অধ্যায়ের শিরোনাম হলো ‘যুদ্ধের সময় অইহুদিদের হত্যা’। এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘ইহুদিদের জীবন রক্ষা করার জন্য, এমন অইহুদিদেরও হত্যা করা যেতে পারে যারা সরাসরি হত্যা সমর্থন করছে না বা তাতে উৎসাহও দিচ্ছে না।’
প্রথম খণ্ড প্রকাশের পর থেকেই বইটি ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। ইসরায়েলের বাম ও প্রগতিশীল গোষ্ঠী বইটি নিষিদ্ধ করার দাবি করলেও নেতানিয়াহু সরকার তা করেনি। ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট বইটির লেখকদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘লেখকদের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সন্দেহ করার কোনো সুযোগ নেই।’
তবে ইসরায়েলের আরবা ও হেবরনের সাবেক প্রধান রাবাই ডোভ লিয়র এবং নেতানিয়াহুর দলের নীতি নির্ধারন পরিষদের সদস্য রাবাই ইয়াকব ইউসেফের মতো প্রভাবশালী ধর্মগুরুরা বইটিকে অনুমোদন দিয়েছেন।
এ কারণেই মূলত ইসরায়েলের সেনারা ফিলিস্তিনি শিশু বা নারী বা বৃদ্ধদের হত্যা করার পর সাধারণত কোনো ধরনের অনুশোচনা বা বিবেক তাড়নায় আক্রান্ত হন না। কারণ, তাঁদের মাথায় থাকে, ইসরায়েলের যারা শত্রু, তারা হলো সেই ‘আমালেক’, যাদের চিহ্ন ঈশ্বর তোরাহ-এর ২৫: ১৭ আয়াতে ‘আকাশের নিচ থেকে’ পুরোপুরি ‘মুছে’ ফেলতে আদেশ দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু বহুবার ইরানকে ‘আমালেক’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। তিনি চলতি বছরের ১৪ মার্চ বেইত শেমেশে অবস্থিত ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমিতে পুরিম উপলক্ষে ‘এস্থারের পুস্তক’ পাঠে অংশ নেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন: ‘আড়াই হাজার বছর পর সেই ভূমিতেই (পারস্য, আজকের ইরান) আবার এক শত্রু ইহুদিদের ধ্বংস করতে উঠে এসেছে। সেও চায় ইহুদি জাতিকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে। কিন্তু তোমাদের মতো বীর উঠে এসেছে—আমাদের জাতির বীরেরা। আমরা বুদ্ধিমত্তা, বীরত্ব ও সাহসিকতায় পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছি। আমরা পারস্য অক্ষকে ভেঙে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইতিহাসের সেই পুরোনো যুদ্ধেই আছি; পারস্য (আজকের ইরান) বনাম ইসরায়েল—হামান বনাম মরদখাই।’
ইসরায়েলের দৈনিক পত্রিকা হারেৎসে ‘কিংস তোরাহ’ বই নিয়ে একটি প্রতিবেদন এবং বইয়ের দুই লেখক রাবাই ইৎসহাক শাপিরা ও রাবাই ইয়োসেফ এলিৎসুর। ২২ মার্চ, ২০১৭ছবি: হারেৎস থেকে নেওয়া
বিবলিক্যাল, কোরআনিক ও ঐতিহাসিক ভাষ্যমতে, ব্যাবিলন তথা আজকের ইরাকের বাদশাহ বখতেনাসর (সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার) বাইতুল মুকাদ্দাস বা জেরুজালেমে অভিযান চালিয়ে ব্যাপকভাবে বনি ইসরাইল বা ইসরায়েলের বংশধরদের (ইহুদিদের) হত্যা করেছিলেন। বাকিদের বন্দী করে ক্রীতদাস হিসেবে ইরাকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এরপর পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সাইরাস দ্য গ্রেট (শাসনকাল: খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫৯-৫৩০) (সাইরাস দ্য গ্রেট এবং কুরআনে উল্লিখিত জুলকারনাইন—এই দুই ব্যক্তিকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহাসিক ও তাফসিরমূলক বিতর্ক রয়েছে।
অনেক মুসলিম পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক মনে করেন, সাইরাস দ্য গ্রেটই জুলকারনাইন; অবশ্য এটি সর্বসম্মত মত নয়।) ব্যাবিলন আক্রমণ করে ইহুদিদের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেন। বখতেনাসর যে সুলাইমানি মন্দির ধ্বংস করেছিলেন, সেটি সাইরাস দ্য গ্রেট পুনর্নির্মাণের অনুমোদন দেন।
অধিকাংশ ইহুদি ফিলিস্তিনে ফিরে এলেও তাদের একটি অংশ ওই সময় পারস্যে বা আজকের ইরানে চলে আসে।
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ এস্থার গ্রন্থের (বুক অব এস্থার) ভাষ্য অনুযায়ী, খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে (আনুমানিক ৪৮০-৪৬৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পারস্য সম্রাট আহাশভেরোশের (আহাশভেরোশ হলেন পারস্য সম্রাট প্রথম জারক্সিস) রাজদরবারে মরদখাই নামের একজন ইহুদি ব্যক্তি চাকরি করতেন। তিনি এস্থার নামে এক তরুণীর দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
এস্থারও ইহুদি ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজের পরিচয় গোপন করেছিলেন। পরে তিনি সম্রাটের প্রিয়ভাজন হন এবং সম্রাট তাঁকে বিয়ে করেন। এস্থার সম্রাটের প্রিয় রানি হন।
সম্রাট আহাশভেরোশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হামান (নোট: মিসরের ফেরাউন বা ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের মন্ত্রীর নামও ছিল হামান) নামের এক ব্যক্তি।
হামান চেয়েছিলেন সবাই যেন তাঁর সামনে মাথা নত করে। কিন্তু মরদখাই মাথা নত করেননি, কারণ তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদী ইহুদি এবং শুধু ঈশ্বরের সামনে তিনি মাথা নত করতেন।
মরদখাই মাথা নত না করায় হামান ক্ষিপ্ত হয়ে পুরো ইহুদি জাতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেন। হামান সম্রাটকে বুঝিয়ে পুর (ডিস্ক বা চাকতির মতো জিনিস) দিয়ে লটারির মতো দৈবচয়নে একটি দিন নির্ধারণ করেন এবং একটি রাজ-আদেশ জারি করেন, যেদিন সব ইহুদিকে হত্যা করা হবে।
এরপর রানি এস্থার নিজের ইহুদি পরিচয় সম্রাটের কাছে প্রকাশ করে হামানের ষড়যন্ত্র ফাঁস করেন। সম্রাট খেপে গিয়ে হামানকে ইহুদিদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য তাঁর নিজেরই বানানো ফাঁসিতে ঝোলানোর নির্দেশ দেন।
এর মাধ্যমে পারস্যে থাকা ইহুদি জাতি রক্ষা পায়। এই কাহিনিকে ইহুদি ধর্মে ‘অস্তিত্বের সংগ্রাম’ হিসেবে দেখা হয়।
এই কাহিনি ইহুদিদের কাছে ন্যায় ও বিশ্বাসের বিজয় এবং অন্যায়ের পতনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। মরদখাইকে ন্যায়, ধৈর্য ও বিশ্বাস এবং হামানকে অহংকার ও শয়তানির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
‘পুর’ বা চাকতিসংক্রান্ত এ ঘটনার স্মরণে প্রাচীনকাল থেকে প্রতিবছর ইহুদিরা ‘পুরিম’ নামের একটি উৎসব পালন করে।
পুরিম উৎসব প্রতিবছর ইহুদি ক্যালেন্ডারের আদার (Adar) মাসের ১৪ তারিখে পালিত হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এটি সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে পড়ে।
কারবালার ঘটনা স্মরণ করে আশুরার দিনে আমাদের দেশে যেভাবে এক সময় পুঁথিপাঠের মতো করে মীর মশাররফ হোসেনের লেখা ‘বিষাদ সিন্ধু’ থেকে পাঠ করা হতো, অনেকটা সেভাবে পুরিম উৎসবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা এস্থারের কাহিনি স্মরণ করে ‘বুক অব এস্থার’ থেকে পাঠ করেন।
এই দিনে ইহুদিরা হামানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। শিশুরা মুখোশ পরে এবং নানা রকম নাটক মঞ্চস্থ হয়।
আধুনিক ইসরায়েলি রাজনীতি, বিশেষ করে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইরানকে হামানের উত্তরসূরি হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং নিজেকে বা ইসরায়েলকে মরদখাই ও এস্থারের জায়গায় দাঁড় করান।
এর মাধ্যমে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ধর্মীয়-ঐতিহাসিক ন্যায়সংগত প্রতিরোধ হিসেবে তুলে ধরেন।
নেতানিয়াহু এর আগে একাধিকবার ইরানকে ‘আমালেক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর গাজার ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার আহ্বান জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন: ‘প্রতিটি প্রজন্মের প্রতিটি হামান, যে কিনা ইহুদি জাতিকে বিলুপ্ত করতে চায়, আমরা তাকে প্রতিহত করব।’
২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর আইডিএফ-এর জেনারেলদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে নেতানিয়াহু বলেন: ‘আপনারা জানেন, আমাদের হোলি বাইবেল আমাদের বলে—“আমালেক কী করেছে, তা মনে রেখো। ” আমরা মনে রেখেছি, তাই আমরা লড়ছি।’
২০১২ সালের ৭ মার্চ ওয়াশিংটন সফরের সময় নেতানিয়াহু তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বুক অব এস্থার গ্রন্থটি উপহার দিয়েছিলেন।
ওই সময় ইসরায়েলপন্থী লবিং গ্রুপ আমেরিকান-ইসরায়েলি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে (আইপ্যাক)দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামান ছিল পারস্যের ইহুদিবিদ্বেষী যে ইহুদি জাতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।’ তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, প্রাচীন পারস্যের উত্তরসূরি ইরান এই মুহূর্তে পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
২০১৭ সালের ১০ মার্চ পুরিম উৎসবের সময় নেতানিয়াহু মস্কো সফর করছিলেন। এ সময় তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে উপহার হিসেবে ‘বুক অব এস্থার’ দেন। উপহারটি দেওয়ার সময় তিনি পুতিনকে বলেছিলেন: ‘আমালেকের বংশধর পারস্যের নেতা হামান আজও ইহুদিদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে; আর আমরাও মরদখাই হয়ে হামানের বিরুদ্ধে লড়ছি।’
২০২৪ সালের ২৪ মার্চ ইসরায়েলের মিলিটারি পুলিশের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন: ‘২ হাজার বছর আগে প্রাচীন পারস্যে ইহুদিবিদ্বেষী হামান ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল৷ আজ আধুনিক পারস্যের ইরানি শাসন একইভাবে ইসরায়েল ধ্বংস করতে চাচ্ছে।’ তিনি আরও যোগ করেন: ‘আমরা হামানকে ধ্বংস করেছি; আমরা সিনওয়ারকেও (হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার যাঁকে ওই বছরেরই ১৬ অক্টোবর ইসরায়েল হত্যা করে ) ধ্বংস করব।’
সেখানে তিনি মিলিটারি পুলিশের কমান্ডার ও সদস্যদের সঙ্গে ‘বুক অব এস্থার’ পাঠে অংশও নেন বলে জানানো হয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে।
ইসরায়েলের মিলিটারি পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২৪ মার্চ, ২০২৪ছবি: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
নেতানিয়াহু তাঁর যাবতীয় রাজনৈতিক, সামরিক তথা সার্বিক কাজকর্মের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে চান, তিনি ইহুদিধর্মগ্রন্থে ইহুদি জাতিকে প্রতিষ্ঠার যে নির্দেশনা দেওয়া আছে, সেটিই তিনি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
ইহুদি ধর্মতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বিশ্বাস করে, নবী মুসাকে (মোজেস) ঈশ্বরের দেওয়া ১০ প্রত্যাদেশের (টেন কমান্ডমেন্টস) ফলক যে সুলাইমানি সিন্দুকে (আর্ক অব দ্য কনভেন্ট) সংরক্ষিত ছিল, তা প্রথম সলোমনের মন্দিরে [মুসলমানরা এটিকে সুলাইমান (আ.)-এর মসজিদ বলে, ইসলামি ভাষ্যমতে, এই মসজিদ সুলাইমান (আ.)-এর আদেশে জিনেরা নির্মাণ করেছিল] রাখা ছিল।
ব্যাবিলনের সম্রাট বখতেনাসর মন্দিরটি (পুনশ্চ: মুসলমানদের কাছে এটি মসজিদ) ধ্বংস করার পর সিন্দুকটি নিখোঁজ হয়ে যায়।
পবিত্র কোরআনে এই সিন্দুকের উল্লেখ আছে: ‘আর তাদের নবী তাদের বলেছিলেন, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট তাবুত আসবে, যাতে তোমাদের রব-এর নিকট হতে প্রশান্তি এবং মুসা ও হারুন বংশীয়গণ যা পরিত্যাগ করেছে, তার অবশিষ্টাংশ থাকবে; ফেরেশতারা তা বহন করে আনবে। তোমরা যদি মুমিন হও, তবে নিশ্চয় তোমাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৪৮)
এই ‘তাবুত’ই হলো সেই সিন্দুক। ইসলামি ভাষ্যমতে, সিন্দুকটিতে নবী মূসা (আ.)-এর লাঠি, পোশাক ইত্যাদি ও তাওরাতের কিছু অংশসহ কিছু বরকতময় চিহ্ন আছে। এটি এখনো অজ্ঞাত স্থানে সুরক্ষিত আছে।
ইহুদিধর্মতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বিশ্বাস করে, সিন্দুকটি টেম্পল মাউন্টের (আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স) নিচে রয়েছে।
এই বিশ্বাস থেকে ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল সরকার মসজিদটির নিচে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সিন্দুকটি খুঁজে চলেছে। সেখানে তারা রীতিমতো ভূগর্ভস্থ ঘর তৈরি করেছে।
২০২৩ সালের ২১ মে নেতানিয়াহু নিজে আল–আকসার নিচে ভূগর্ভস্থ ঘরে মন্ত্রিসভা নিয়ে বৈঠক করেছেন। পরদিন ২২ মে মিডল ইস্ট মনিটর ‘ইসরায়েল: ক্যাবিনেট হোল্ডস মিটিং বিনিথ আল-আকসা মস্ক’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে।
তাতে বলা হয়, দখল করা জেরুজালেম এবং এখানকার পবিত্র স্থানগুলোর ওপর ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রদর্শনের অংশ হিসেবে আল-আকসা মসজিদের নিচে একটি সুড়ঙ্গে ইসরায়েলের দখলদার সরকার মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছে।
সুড়ঙ্গ কেটে আল আকসা মসজিদের নিচে বানানো ভূগর্ভস্থ ঘরে ২০২৩ সালের ২১ মে নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভা বৈঠক করে।ছবি: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া
মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এএফপির এক খবরে বলা হয়, সেখানে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কয়েক দিন আগে, আবু মাজেন (ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ডাকনাম আবু মাজেন) বলেছিলেন, জেরুজালেম এবং আল-হারামের (হারাম আল শরিফ) সঙ্গে ইহুদি জনগণের সম্পর্ক নেই। তাই আমি তাঁকে বলছি, আপনি দেখুন, আমরা আজ জেরুজালেম ও আল-হারামের পেটের ভেতরে বসে আমাদের সভা করছি।’
ইসরায়েলি দৈনিক ‘মারিভ’-এর বরাত দিয়ে মিডলইস্ট মনিটর জানায়, ওই বৈঠকের সময় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের একটি বড় বাজেট এবং জেরুজালেমের জন্য বেশ কয়েকটি ‘জুডাইজেশন প্রকল্প’ অনুমোদন করে।
এই বাজেট এবং প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য আল-আকসা মসজিদের নিচে আরও টানেল খনন করতে উৎসাহিত করা, যা অনিবার্যভাবে মসজিদের প্রাচীন কাঠামোকে দুর্বল করে দেবে।
সুড়ঙ্গটি শুরু হয়েছে আল-আকসার সেই প্রাচীরের নিচে, যার ফোকরে নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইরানে চালানো অভিযানের নামের ইঙ্গিত দেওয়া চিরকুটটি ফেলে এসেছিলেন।
অথচ এই প্রাচীরের সঙ্গেও ইসরায়েলের আজকের ঘোর শত্রু ইরান তথা পারস্য সাম্রাজ্যের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
সংক্ষিপ্ততম ইতিহাস হলো: খ্রিষ্টপূর্ব দশম শতকে বাদশাহ সুলাইমান (কিং সলোমন) প্রথম উপাসনালয়টি বানান। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৬ সালে বখতেনাসর এটি ধ্বংস করেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৩৮ সালে পারস্যের, অর্থাৎ আজকের ইরানের সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট এটি আবার বানানোর অনুমতি দেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৫১৬ সালে পারস্য সম্রাট দারিউস প্রথম-এর সময় এটির পুনর্গঠন শেষ হয়।
৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট টাইটাস ইহুদি বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে জেরুজালেম দখল করেন। সে সময় রোমান বাহিনী দ্বিতীয়বার এটি ধ্বংস করে।
ইহুদিদের বিশ্বাস, পারস্য সম্রাট দারিউস প্রথম-এর পুনর্নির্মিত মন্দিরের (ইহুদিরা যেটিকে বলে ‘সেকেন্ড টেম্পল’) সর্বশেষ ধ্বংসাবশেষ হিসেবে দেয়ালটি টিকে আছে। আজকের আল-আকসা মসজিদের (‘টেম্পল মাউন্ট’) পশ্চিমে অবস্থিত এই দেয়ালটির নাম ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’।
এই দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে প্রাচীনকাল থেকে ইহুদিরা সেকেন্ড টেম্পল ধ্বংসের শোকে কাঁদেন। সে কারণে এই দেয়ালকে ‘ওয়েইলিং ওয়াল’ বা ‘কান্নার দেয়াল’ বলে। ইহুদিরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরুর আগে এখানে এসে প্রার্থনা করেন।
নেতানিয়াহুও যেকোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়ার আগে এখানে আসেন। প্রার্থনা করেন।
গত বৃহস্পতিবার এখানে এসে তিনি নিজেকে ‘মরদখাই’ আর ইরানকে ‘হামান’ ও ‘আমালেক’ সাব্যস্ত করে হামলা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু ইরানের এক শাসকই একদিন ইহুদিদের ইরাকের এক শাসকের কবল থেকে মুক্ত করে যে মন্দির ফের বানিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই মন্দিরেরই শেষ অবশিষ্টাংশে হাত রেখে যে তিনি হামলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন, তা হয়তো তাঁর মনে ছিল না।